স্বাধীনতার লাল সূর্য

একটি নতুন সূর্য (ডিসেম্বর ২০২৩)

হাফিজ ভাই
মোট ভোট ৫২ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.৩৪
  • ১৬
  • ৮৭
আমি সাঁতার জানিনা। সাঁতার জানলে নদী পার হওয়ার রিক্স নিতাম। গাছে উঠতে ও পারিনা। মগডালে উঠে লুকিয়ে থাকার ক্ষমতা কিংবা সাহস কোনোটাই আমার নেই। কারন acrophobia তো আছেই। যে যার মতো পালিয়ে গেছে। পুরো গ্রামটা তারা ঘিরে ফেলেছে। পেলেই গুলি করছে। অন্যদের ছেড়ে দেওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকলেও আমাকে ছাড়ার কোন কারন নেই।  আমার মতো দেখতে হুবহু একজন তাদের শত্রু তালিকার শীর্ষে আছেন। সে অনেক গুলো মিলিটারিকে মেরে ফেলেছে। হাবুল মিয়া তাদের সহযোগী ।  যে লোককে জুম্মাঘরে দেখিনি কখনো সে এখন পুরোদস্তুর নিজেকে ধর্মভীরু প্রকৃত মুসলমান দাবী করছে। পাক বাহিনীর  লোক হয়ে নিজের গ্রামের লোকদের ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর দিকে। হুবহু আমার মতো দেখতে লোকটার নাম দুলাল। সে আমার যমজ ভাই। দেখতে একরকম হলেও সাহসের দিক দিয়ে পুরোই আমার থেকে উল্টে।  এই গ্রামে সেই প্রথম মুক্তিবাহিনীতে নাম লেখায়। গতকাল তার নেতৃত্বে ১৭ জন হানাদার হত্যা করা হয়। এরপর  ওরা  ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের গ্রামে হামলা চালায়। এখন যে যার মতো জান নিয়ে পালাচ্ছে। দুলাল কোথায় আছে আমি জানিনা। মনে একটাই ভয় দুলাল ভেবে বা ওর ভাই হওয়ার জন্য আমাকেই না জানি মরতে হয়। খুব ইচ্ছা করে সাহস দেখিয়ে হানাদারদের সামনে যেয়ে বলি কিল মি বাস্টার্ড।  তোদের দিন ঘনিয়ে এসেছে। বেশি দিন আর এই বাংলার বুকে অত্যাচার করে যেতে পারবি না। জয় বাংলা। কিন্তু সাহসে যে কুলায় না। পাক বাহিনীর পায়ের শব্দে আঁতকে উঠলাম।

পাকবাহিনী আমার খুব কাছাকাছি। হাবলু মিয়াঁর কণ্ঠ শুনতে পেলাম। বলছে, "স্যার জি সব লোক ভাক গায়া। হারামি দুলাল গাং ও ভাগ গায়া। কুছ লোক উধার ভাগতাহে"

হানাদার বাহিনী গুলি ছুড়তে লাগলো। পালিয়ে যেতে থাকা অনেকেই গুলি খেয়ে প্রাণ হারালো। আমার নিশ্বাস বন্ধ অবস্থা। আমি আছি কাঁদা পানির মাঝে। উপরে পাক নিচে প্যাক। হয় পাক বাহিনীর গুলিতে আমার প্রাণ যাবে। নয়তো দম ফেটে প্যাকের তলে ঘটবে আমার মৃত্যু। আল্লাহ আমাকে সাহসী করে যদি পাঠাতো মৃত্যুর আগে কিছু পশুকে হত্যা করে মারতে পারতাম। তবে সেই সাধ্য আমার আর কোথায়?


অচেতন হয়ে পরছি। চোখের সামনে ভাসছে কিশোর বয়সের কিছু স্মৃতি। আমি পড়ালেখায় চ্যাম্পিয়ান আমার ভাই অন্য সব কিছুতে চ্যাম্পিয়ান।  একদিন একটা সাপ এসে আমাদের খুব কাছাকাছি। ছোবল মারার জন্য দুলালের পায়ের দিকে চেয়ে আছে। আমার সাহসী ভায়ের একমাত্র ভীতি যে সাপে, সেই সাপ তাকে যে কোন সময় ছোবল মারবে। আমি হুট করে হাত চালিয়ে সাপটাকে ধরে ফেললাম। দুলাল ভয়ে ফ্রিজ হয়ে গেছে। মা দূর থেকে বলল এ কি ভয়ংকর কথা দুলাল তুই জ্যান্ত সাপ ও হাত দিয়ে ধরতে পারিস। আমি হেসে উঠে বললাম মা আমি দুলাল না আলাল। তোমার সাহসী ছেলে সাপের ভয়ে কাঁপছে তুমি হয়তো জানো না তোমার আলাল সব কিছুকে ভয় পেলেও সাপ কে ভয় পায় না। 

খুব কাছাকাছি গুলা গুলির শব্দ পেলাম। আর্তনাদ ও শুনতে পেলাম। হাবলু মিয়া বললো স্যার মুক্তি বাহিনী আক্রমণ কার দিয়া। পাক বাহিনীও অবস্থান নিয়ে পালটা গুলি শুরু করলো। আমি মুক্তিবাহিনীর জন্য দুয়া করতে করতে মাথা উঁচু করলাম।  দেখতে পাচ্ছি হাবলু মিয়া এবং এক পাক কমান্ডার আমার খুব কাছাকাছি ঝোপের আড়ালে বসে আছে। মুক্তিবাহিনী ও জীবন বাজি রেখে এগিয়ে আসছে। আস্তে আস্তে  পাক সেনারা সব লুটিয়ে পড়লো। মুক্তি বাহিনী দেখতে পেলাম না। মাত্র দুজনকে দেখতে পেলাম। দুলাল আর অন্য একজন। আহতদের উপর গুলি চালিয়ে সবাইকে মৃত ভেবে রাইফেল রেখে জয় বাংলা বলে চিৎকার করতে লাগলো ওরা। হুট করে পিছন থেকে এসে আলালের মাথা বরাবর গুলি রেখল অফিসার। হাবুল এবং আরেকজন লুকিয়ে থাকা একমাত্র সৈনিক দৌড়ে এসে অন্যজন কে ধরলো। অফিসার বলল,  
"শালা মুক্তি। শালা কামিনে। তুম চাবন খারকে লড়নে আয়ে হো। উল্লু কাহেকা হে। আব মারনে কি তায়ারি কোরো। " আমি অসহায় ভাবে আল্লাহকে ডাকছি। আমার ভায়ের এখন মৃত্যুর খুব কাছাকাছি। আমি নিজেকে বোকা বলদ বলে গালি দিয়ে হঠাৎ সাপ দেখে চমকে উঠলাম। হুট করে লাফ দিয়ে ওকে ধরে ফেললাম। সাপটা ছুড়লাম ঐ অফিসারের গায়ে। ক্ষিপ্ত সাপ ওর ঘারে কামড়ে দিলো। সাপ দেখার মুহূর্তেই ভয়ে পাক সোলজার  অস্ত্র ফেলে দিলো। দুলালের সাথে থাকা লোকটা ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর উপর। আমি অস্ত্র তুলে নিয়ে হাবলুর মাথা বরাবর ধরে বললাম। আমার অস্ত্রের ট্রেনিং আগে থেকেই নেওয়া ছিলো দুলালের জোরাজুরিতে। তবে মারার সাহস কখন হয়নি। তবে বাংলা মায়ের শান্ত ছেলে শত্রু এলে অস্ত্র হাতে তুলে ঘায়েল করতে দ্বিতীয়বার ভাবে না। জয় বাংলা বলে হাবলুকে গুলি করলাম। দুলাল বলল সাবাস ভাই সাবাস। ভাই যখন ভাইয়ের পাশে থাকে। এই তিমির অন্ধকার দূর হয়ে নতুন সূর্য উঠতে বাধা থাকেনা। আমার দেশ খুব জলদি স্বাধীন হবে। স্বাধীন দেশে স্বাধীন পতাকা নিয়ে ছুটে বেরুবো পুরো দেশে। 
ভায়ের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা গান গেয়ে উঠলো

পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে
রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল
জোয়ার এসেছে জন-সমুদ্রে
রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল।।
বাঁধন ছেঁড়ার হয়েছে কাল,
হয়েছে কাল, হয়েছে কাল।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Sajjad Saddam অভিনন্দন
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০২৪
শিশির সিক্ত পল্লব ভালো লিখেছেন
ভালো লাগেনি ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩
ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
মোঃ মাইদুল সরকার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সুন্দর গল্পে+++
ভালো লাগেনি ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩
ধন্যবাদ ভাই
ভালো লাগেনি ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩
Bulu Hossen চমৎকৃত হলাম। অসাধারণ
ফাতেমা জহুরা ভালো লেগেছে গল্প
ধন্যবাদ মা
অথই মিষ্টি সুন্দর হয়েছে
ধন্যবাদ মা

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

বাংলাদেশ পরাধীন। চারিদিকে অত্যাচারে লিপ্ত পাপ হানাদার বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য লড়ে যাওয়া মুক্তি বাহিনী জানে। একদিন দেশ স্বাধীন হবে উঠবে নতুন সূর্য।

০২ জুলাই - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ৪ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.৩৪

বিচারক স্কোরঃ ২.৫ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.৮৪ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪